পরিকল্পনা প্রণয়নের ধাপ বা বিভিন্ন পদক্ষেপ

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ২য় পত্র | | NCTB BOOK

পরিকল্পনা ব্যবস্থাপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ । এটি একটি চিন্তন-মনন প্রক্রিয়া; যা প্রণয়নকালে ভবিষ্যৎ নানান বিষয় বিবেচনার প্রয়োজন পড়ে। এটি কোনো আবেগ বা শুধুমাত্র অনুমাননির্ভর কার্য নয়, বরং বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় পরিকল্পনা রচিত হয় । পরিকল্পনার ব্যাপ্তি প্রতিষ্ঠানের সর্বস্তরে পরিব্যপ্ত হওয়ায় এর উপরিস্তরে দীর্ঘমেয়াদি বা মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। ফলে সেখানে পরিকল্পনা গ্রহণে যথেষ্ট চিন্তা-ভাবনা ও বিচার-বিশ্লেষণের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু মধ্য ও নিম্ন পর্যায়ে ঐ পরিকল্পনার আলোকে বিভাগীয় ও কার্যভিত্তিক যে সব পরিকল্পনা নেয়া হয় সেখানে বিচার-বিশ্লেষণের আবশ্যকতা স্বভাবতই কমে আসে । তথাপিও কার্যকর পরিকল্পনা প্রণয়নে যে সকল ধারাবাহিক পদক্ষেপ অনুসৃত হয় তা নিম্নে রেখাচিত্রের সাহায্যে তুলে ধরা হলো :

চিত্র : পরিকল্পনা প্রণয়নের বিভিন্ন পদক্ষেপ

রেখাচিত্রে প্রদর্শিত পদক্ষেপসমূহ নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো :

১. ভবিষ্যৎ মূল্যায়ন (Evaluating future) : প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ শক্তি (Strength) ও দুর্বলতা (Weakness) এবং বাহ্যিক সুযোগ (Opportunity) ও বাধা (Threat) চিন্তায় নিয়ে ভবিষ্যৎ অবস্থা কেমন হতে পারে তার আগাম মূল্যায়নকে পরিকল্পনা প্রণয়নে ভবিষ্যৎ মূল্যায়ন বলে । এক্ষেত্রে বাইরের বিভিন্ন পক্ষ; যেমন- গ্রাহক, প্রতিযোগী, সরবরাহকারী ইত্যাদি পক্ষের প্রতিক্রিয়া গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করার প্রয়োজন পড়ে । অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন বিষয়; যেমন- আর্থিক সুযোগ-সুবিধা, যন্ত্রপাতির মান, ব্যবস্থাপক ও কর্মীদের দক্ষতা ইত্যাদিও এক্ষেত্রে বিবেচনা করতে হয় । যার আলোকেই ভবিষ্যৎ মূল্যায়নে প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে জানা যায় ।

২. লক্ষ্য নির্ধারণ (Establishing goal) : পরিকল্পনা গ্রহণের পূর্বে কোন ফল অর্জনের জন্য তা প্রণীত হবে পূর্বেই তা নির্ধারণকে পরিকল্পনার লক্ষ্য নির্ধারণ বলে । বাস্তব অবস্থা ও ভবিষ্যৎ সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে ধারণা গ্রহণপূর্বক তার আলোকে প্রতিষ্ঠানের মৌলিক লক্ষ্য নির্ধারণ এবং সে অনুযায়ী বিভাগ ও উপ-বিভাগের লক্ষ্য ও অধি- লক্ষ্য (Sub-goal) নির্ধারণ পরিকল্পনার পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ ধাপ । ধরা যাক, একটা প্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদন বিগত বছরের তুলনায় ১০% ভাগ বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে । তবে তার আলোকে বিভিন্ন বিভাগের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে । এ সকল লক্ষ্য অবশ্যই সুস্পষ্ট এবং সমন্বিত হওয়া উচিত ।

৩. বিকল্প স্থিরকরণ (Determining the alternatives) : অনুমিত অবস্থার মধ্য দিয়ে কিভাবে লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে এ জন্য বিভিন্ন বিকল্প কার্যপদ্ধতি দাঁড় করানোর কাজকেই পরিকল্পনায় বিকল্প স্থিরকরণ বলে । ধরা যাক, ভবিষ্যতে কোনো বিশেষ দ্রব্যের চাহিদা ব্যাপকভাবে বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে । এখন এই বর্ধিত বাজারে কিভাবে একটা প্রতিষ্ঠান নিজেদের বিক্রয় বাড়াবে এজন্য বিভিন্ন বিকল্প; যেমন-মূল্য কমানো, বিজ্ঞাপন বাড়ানো, পণ্যের মান উন্নয়ন ইত্যাদি যেকোনো এক বা একাধিক বিষয় বিবেচনা করতে পারে । বিকল্পের সংখ্যা বেশি হলে তার মধ্য হতে একেবারে দুর্বল বিকল্প বাদ দিয়ে শক্তিশালী বিকল্পসমূহ নির্দিষ্ট করা হয়ে থাকে ।

৪. বিকল্পসমূহ মূল্যায়ন (Evaluation of alternatives) : দাঁড় করানো প্রতিটা বিকল্প তার সুবিধা- অসুবিধার আলোকে কতটা গ্রহণযোগ্য তা বিবেচনা করার কাজকেই বিকল্পসমূহ মূল্যায়ন বলে । এক্ষেত্রে বিকল্পসমূহ অনুমিত অবস্থা ও লক্ষ্যের আলোকে বিবেচনা করতে হয় । সাধারণ বিচারে কোনো বিকল্প সর্বোত্তম মনে হলেও প্রাতিষ্ঠানিক বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় ঐ বিকল্প গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে । প্রয়োজনে প্রতিটা বিকল্পকে একেকটি প্রজেক্ট হিসেবে বিবেচনা করে তাতে সম্ভাব্য ব্যয়, প্রাপ্তব্য সুবিধা ও অসুবিধা পৃথকভাবে বিবেচনা করতে হয় ।

৫. সর্বোত্তম বিকল্প গ্রহণ (Selecting the best alternative) : বিকল্পসমূহ মূল্যায়নের পর প্রতিষ্ঠানের বাস্তবতার আলোকে কার্যকর বিকল্পটি খুঁজে বের করাকেই সর্বোত্তম বিকল্প গ্রহণ বলে । ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার একাধিক বিকল্প পথ রয়েছে । এখন কোনো ব্যক্তি কোন্ পথে সেখানে যাবে তা তার প্রয়োজন, সময় ও বাস্তব অবস্থার আলোকেই নির্ধারণ করতে হয় । বিজ্ঞাপন না বাড়িয়ে মধ্যস্থ ব্যবসায়ীদের কমিশনের পরিমাণ বৃদ্ধির বিষয়টি লাভজনক বিবেচিত হতে পারে । বাছাইকৃত বিকল্পটি কার্যকরী মৌলিক পরিকল্পনা হিসেবে গৃহীত হয় এবং তাকে পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা হিসেবে রূপায়িত করা হয়ে থাকে ।

৬. সহায়ক পরিকল্পনা প্রণয়ন (Preparing derivative plans ) : মৌলিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য কোনো সহায়ক বা সহযোগী ভিন্ন পরিকল্পনা নেয়া হলে তাকে সহায়ক পরিকল্পনা বলে। মূল পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রয়োজনেই অনেক সময় প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন সহায়ক পরিকল্পনা গ্রহণের প্রয়োজন পড়ে । ধরা যাক, একটা বিমান কোম্পানি কয়েকটা নতুন বিমান ক্রয়ের পরিকল্পনা নিচ্ছে। এখন এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কতকগুলো সহায়ক পরিকল্পনা নিতে হবে; যেমন-ক্রু সংগ্রহ, তাদের প্রশিক্ষণ, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ সুবিধা সৃষ্টি ইত্যাদি ।

সবশেষে বলা যায়, নিয়মতান্ত্রিক ও স্থায়ী পরিকল্পনার ক্ষেত্রে উপরোক্ত ধারাবাহিক পদক্ষেপ খুবই ফলপ্রদ হলেও একার্থক বা জরুরিভাবে গৃহীত পরিকল্পনার ক্ষেত্রে উপরোক্ত ধারাবাহিক প্রক্রিয়া সবসময় অনুসরণ করা যায় না । তবে যতদূর সম্ভব উপরে বর্ণিত প্রক্রিয়া অনুসরণে এক্ষেত্রে ভালো ফলাফল পাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে ।

Content added By
Promotion